রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিক — বাংলার স্বদেশী আত্মার অন্যতম আলোকশিখা

কলকাতার পটলডাঙ্গার শান্ত পরিবেশে ৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৯ সালে জন্ম নিয়েছিলেন এক মহৎ প্রাণ—পিতা প্রবোধ চন্দ্র বসু মল্লিক ও মাতা কুমুদিনী বসু মল্লিকের স্নেহে লালিত এক স্নিগ্ধ, মিষ্টি স্বভাবের তরুণ। ছোটবেলা থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো, দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন তাকে টানত। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পড়া শেষ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি, পরে এফ এ পাশ করে আইন পড়তে ইংল্যান্ডের ট্রিনিটি কলেজে যাওয়া—সবই ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই পারিবারিক কারণে ফিরে এসে তিনি জীবনের পথ ঘুরিয়ে নিলেন দেশের জন্য। এই সেই তরুণ, যার নাম পরে ইতিহাসকে আলোকিত করল— রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিক

দেশে ফিরে তাঁর স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্ব, মমতাভরা স্বভাব আর গভীর দেশপ্রেম মিলেমিশে রচনা করল এক নতুন অধ্যায়। ওয়েলিংটন স্কোয়ারে তাদের বাড়িটি হয়ে উঠল স্বদেশী আন্দোলনের কেন্দ্র। বিপ্লবীদের সাথে মিশে যেতেন, আশ্রয় দিতেন, সাহস দিতেন। শ্রীঅরবিন্দকে তিনি দীর্ঘদিন নিজের বাড়িতে রাখেন—যে বাড়ি থেকেই “বন্দেমাতরম” পত্রিকার জন্ম। দেশের শিক্ষা আন্দোলনকে শক্ত ভিত দিতে ১৯০৬ সালে যাদবপুরে জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দান করেন ১ লক্ষ টাকা। কৃতজ্ঞ দেশবাসী সেদিন তাকে ভালোবেসে দিল এক বিশেষ উপাধি—“রাজা”।
দেশের প্রতিটি প্রয়োজনে তিনি ছিলেন অগ্রণী। সুরাট কংগ্রেসে বাঙালি প্রতিনিধিদের ব্যয়ভার তিনিই বহন করেন, বরিশাল কনফারেন্সে যোগ দেন, ঘুরে বেড়ান পূর্ববঙ্গের নানা প্রান্ত। ১৯০৮–১৯১০ সালে বিনাবিচারে আটকও ছিলেন। ১৯০৬ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “লাইট অফ এশিয়া ইন্সিওরেন্স কোম্পানি”—দেশীয় অর্থনীতির ভিত্তি শক্ত করার প্রয়াসে।
১৪ নভেম্বর ১৯২০—কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। কিন্তু শেষ হয়নি তাঁর পথচলা; তাঁর দান, ত্যাগ, দেশপ্রেম আজও আলো ছড়ায় স্বদেশী আন্দোলনের ইতিহাসে। বাংলার আকাশে তিনি এক চিরপ্রজ্বলিত দীপশিখা— রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিক, যার হৃদয় ছিল দেশমায়ের জন্য।
— লেখায় : প্রকাশ রায়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ