আজ আমরা জানবো এক বিস্মৃতপ্রায় অমর বিপ্লবী বসন্ত কুমার বিশ্বাস–এর কথা। তাঁর রক্তে ছিল বীরত্বের উত্তরাধিকার। তাঁর পূর্বপুরুষ দিগম্বর বিশ্বাস ছিলেন একজন প্রভাবশালী জমিদার, যিনি সাহসিকতার সঙ্গে নীলকর সাহেবদের জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি গ্রামীণ কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সংগ্রাম করেছিলেন।
এই দিগম্বর বিশ্বাসের উত্তরসূরী বসন্ত কুমার বিশ্বাস জন্মগ্রহণ করেন ৬ই ফেব্রুয়ারি ১৮৯৫ সালে, পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার পোড়াগাছা গ্রামে। অল্প বয়সেই তিনি রাসবিহারী বসুর সংস্পর্শে এসে বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত হন এবং 'যুগান্তর' বিপ্লবী দলে যোগ দেন।
দলের গোপন পরিকল্পনা ছিল — তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ-কে হত্যা করা। বসন্ত বিশ্বাস ও রাসবিহারী বসু দিল্লিতে বোমা নিক্ষেপের জন্য দেরাদুনে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দিনটি ছিল ২৩শে ডিসেম্বর, ১৯১২। দিল্লির চাঁদনি চক-এ ভাইসরয়ের শোভাযাত্রা চলাকালীন, বসন্ত স্ত্রীর ছদ্মবেশে 'লীলাবতী' রূপে উপস্থিত হয়ে লক্ষ্যে বোমা ছোঁড়েন। যদিও লর্ড হার্ডিঞ্জ প্রাণে বেঁচে যান, তবে এই হামলা গোটা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে তোলপাড় ফেলে দেয়।
সেখান থেকে তারা পালিয়ে সক্ষম হন। কিন্তু ১৯১৪ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি, পিতার শেষকৃত্যে গ্রামে এলে এক আত্মীয়র বিশ্বাসঘাতকতায় কৃষ্ণনগরে গ্রেপ্তার হন বসন্ত। ২১ মে থেকে শুরু হয় 'দিল্লি-লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা'। ৫ই অক্টোবর তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলেও, ব্রিটিশ সরকার তাঁর ফাঁসিকেই চূড়ান্ত রায় বানাতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
আম্বালা জেলে বসন্তের ফাইলে কারচুপি করে তার বয়স দুই বছর বাড়িয়ে দেখানো হয় — প্রমাণ করার জন্য যে, তিনি তার "অপরাধ" সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। আদালতের এই প্রহসনের পরিণতিতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
১১ই মে, ১৯১৫, আম্বালার জেলে ফাঁসির মঞ্চে হাসিমুখে মৃত্যু বরণ করেন বিপ্লবী বসন্ত কুমার বিশ্বাস।
- লেখায়: প্রকাশ রায়


0 মন্তব্যসমূহ