জেলের ঘরে আলো-আঁধারিতে ভাইয়ের মুখটা শেষবারের মতো দেখতে এলেন দাদা আশুতোষ। চারপাশে নীরবতা, কেবল পায়ের শব্দের প্রতিধ্বনি। চোখের কোণে জল টলমল, গলায় থেমে থাকা হাজার কথার ভার। মৃদু কণ্ঠে আশুতোষ বললেন, “তোরা যা করেছিস, তা বাঙালির গর্ব। তোর চশমাটা দে, একটা কিছু তো আমার কাছে রাখি।” শুনে ভাইটি হেসে উঠলেন, সেই চেনা দৃপ্ত হাসি—“দাদা, এখন দিতে পারব না চশমাটা। চোখে হাইপাওয়ার তো! ফাঁসির মঞ্চে যদি হোঁচট খাই, ওরা ভাববে বাঙালির ছেলে মৃত্যুর আগে ভয় পেয়েছে। মৃত্যুর পর নিয়ে নিও।” এই বলেই মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন তিনি, যেন মৃত্যুর দোরগোড়াতেও গর্বের সাথে ঘোষণা দিলেন—আমি কানাইলাল দত্ত, বাঙালির সন্তান।
আইনজীবী তখনও অনুরোধ করছিলেন, “আপিল করুন, কানাইলালবাবু। এখনও হাইকোর্ট আছে, সুপ্রিম কোর্ট আছে, প্রিভি কাউন্সিল আছে…” কিন্তু উত্তরে কানাইলালের চোখে ঝলসে উঠেছিল বিদ্রোহের আগুন—“দেয়ার শ্যাল বি নো অ্যাপিল।” মৃত্যুর মুখেও তাঁর কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তার ঝংকার। পরে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছিলেন আবেগভরে, “ওহে, কানাই শিখিয়ে দিয়ে গেল কোথায় শ্যাল ব্যবহার করতে হয়, আর কোথায় উইল।”


0 মন্তব্যসমূহ