লীলা রায় ছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অনন্য নেত্রী। জীবনের বহু সময় তাঁকে কারাগারের অন্ধকার কুঠুরিতে কাটাতে হয়েছে দেশের জন্য। শুধু তাই নয়, তিনি মহিলা সমাজকে সংগঠিত করতে এগিয়ে এসেছিলেন এবং মুখপত্র হিসেবে “জয়শ্রী” নামের পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। গান, ছবি আঁকা কিংবা সেতার বাজানো—সবকিছুতেই ছিল তাঁর সমান দক্ষতা। দেশভাগের দাঙ্গার সময় তিনি নোয়াখালীতে গান্ধীজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং নারীর শিক্ষা ও উন্নয়নে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে যান।
তার প্রতিষ্ঠিত দীপালী সংঘ ছিল নারীর মুক্তি আন্দোলনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিবাহের আগে তিনি লীলা নাগ নামে পরিচিত ছিলেন, আর বিবাহের পর নাম হয় লীলা রায়। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী এবং পরবর্তীতে প্রথম এমএ ডিগ্রিধারী নারী। এমনকি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সহকারী হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।
১৯০০ সালের ২ অক্টোবর আসামের গোয়ালপাড়ায় জন্ম নেন লীলা নাগ। তাঁর পিতা গিরীশচন্দ্র নাগ ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট। শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা পরিবারেই তাঁর বড় হওয়া। ১৯৩৯ সালে তিনি বিপ্লবী অমিত রায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
শিক্ষাজীবনে লীলা রায়ের যাত্রা শুরু ঢাকার ইডেন স্কুলে। ১৯২১ সালে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বি.এ পাশ করে মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং পদ্মাবতী স্বর্ণপদক লাভ করেন। সেই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এম.এ ভর্তি হন এবং ১৯২৩ সালে এম.এ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর ড. হার্টস তাঁর মেধার স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে বিশেষ অনুমতিতে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন।
সমাজসেবার ক্ষেত্রেও লীলা রায় ছিলেন অগ্রণী। মেয়েদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন সেলাই ও নকশা কাজ শেখাতেন এবং বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতেন। তাঁর এই উদ্যোগ নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথ খুলে দেয়।
তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকার আরমানীটোলা বালিকা বিদ্যালয়, কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল এবং নারীশিক্ষা মন্দির (পরবর্তীতে শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়)। কলকাতায় গিয়েও তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পিছপা হননি।
১৯৭০ সালের ১১ জুন এই মহীয়সী নারীর জীবনাবসান ঘটে। তবে স্বাধীনতা সংগ্রাম, নারীশিক্ষা এবং সমাজসেবায় তাঁর অগ্নিকন্যার মতো দীপ্তি আজও অম্লান।
লেখায় :: প্রকাশ রায়


0 মন্তব্যসমূহ