অগ্নিকিশোর মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত

মেদিনীপুরের এক সূর্যসন্তান, অগ্নিকিশোর মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত। জন্মেছিলেন ১৯১৫ সালের ২৭ অক্টোবর, মেদিনীপুর জেলার পাহাড়িপুর গ্রামে। পিতা বেণীমাধব দত্তের আদর্শে বড় হয়ে ওঠা এই কিশোর ছাত্র ছিলেন মেদিনীপুর টাউন স্কুলের। কৈশোরেই যুক্ত হন ব্রিটিশবিরোধী গোপন বিপ্লবী সংগঠন 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স'-এ এবং স্বপ্ন দেখেন স্বাধীন ভারতের।

ততদিনে পেডি ও ডগলাস নামের দুই ইংরেজ কর্তাকে হত্যা করেছে বাংলার বীর তরুণেরা। ব্রিটিশ সরকার প্রতিশোধ নিতে মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট করে পাঠায় বার্জকে। কিন্তু এই বার্জ খুব শিগগিরই হয়ে ওঠেন বিদ্রোহীদের রক্তচক্ষু। দেশবাসীর ওপর নির্মম অত্যাচার আর বিপ্লবীদের কার্যক্রম দমন করতে বার্জ হয়ে উঠেছিলেন এক নিষ্ঠুর হাতিয়ার। তাই তাঁকে সরানোর গুরু দায়িত্ব এসে পড়ে মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত ও তার সাহসী সাথীদের কাঁধে।

সঙ্গী ছিলেন অনাথবন্ধু পাঁজা, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ। ১৯৩৩ সালের ২রা সেপ্টেম্বর। দিনটা ছিল এক ফুটবল খেলার—মোহামেডান স্পোর্টিং বনাম মেদিনীপুর ক্লাব। পুলিশ লাইন মাঠে খেলতে নেমেছিলেন বার্জ সাহেব নিজেই। মৃগেন্দ্রনাথ ও অনাথবন্ধু পাঁজা মাঠে নামেন প্র্যাকটিসের ছলে, কিন্তু তাদের অন্তরে ছিল একটাই সংকল্প—দেশের শত্রুকে সরানো।

আচমকা গুলির শব্দে থমকে যায় গোটা মাঠ। বার্জ লুটিয়ে পড়েন। আহত হন জোন্স নামে আরও একজন ইংরেজ। পাল্টা গুলিতে অনাথবন্ধু ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মৃগেন্দ্রনাথকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৩রা সেপ্টেম্বর, ১৯৩৩—বাংলা ও ভারতের ইতিহাসে এক বিষণ্ন, গৌরবময় সকাল।

যে তরুণরা এই অভিযানে সহায়তা করেছিলেন—তাদেরও কপালে ছিল না রেহাই। ব্রজকিশোর, রামকৃষ্ণ ও নির্মলজীবনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অন্যদের—নন্দদুলাল সিং, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন ও সনাতন রায়—দেওয়া হয় দ্বীপান্তর।

এই ছিল অগ্নিযুগের এক অমর অধ্যায়, যেখানে মৃত্যু ছিল তুচ্ছ, মায়ের চোখের জলই ছিল শেষ বিদায়ের ভাষা। স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত আজও ইতিহাসের পাতায় লেখা এক দীপ্তিমান নাম।

প্রণাম, বিপ্লবী মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত।

- লেখায়: প্রকাশ রায়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ