PRAKASH ROY Official : অগ্নিদীপ্ত নরসিংহ রেড্ডি
অগ্নিদীপ্ত নরসিংহ রেড্ডি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
অগ্নিদীপ্ত নরসিংহ রেড্ডি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

নরসিংহ রেড্ডি: ভারতের প্রথম স্বাধীনতার অগ্নিশিখা

নভেম্বর ২৪, ২০২৫
নরসিংহ রেড্ডি: ভারতের প্রথম স্বাধীনতার অগ্নিশিখা

ভারত তখনো শৃঙ্খলের ভারে নত, কৃষকদের বুকজুড়ে ক্ষোভ আর অসহায়তা। ব্রিটিশ শাসনের দাপটে জীবন হয়ে উঠেছিল বোঝা, আল্লাগাড্ডা অঞ্চলে কর আদায়ের দায়িত্ব হাতে পেলেও নরসিংহ রেড্ডির মন ভেঙে যাচ্ছিল মানুষের কষ্ট দেখে। অত্যাচারের মাত্রা যখন সীমা ছাড়াল, তখন তিনি আর নীরব থাকলেন না—জাগিয়ে তুললেন প্রতিরোধের আগুন, তুলে দাঁড়ালেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রথম দেশপ্রাণ হিসেবে। সেই অগ্নিদীপ্ত নাম—নরসিংহ রেড্ডি

নরসিংহ রেড্ডি

১৮০৬ সালের ২৪ নভেম্বর, আন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল জেলার এক সামরিক পরিবারে জন্ম তাঁর। দাদা জয়ারামি রেড্ডি, পিতা পেডডামল্লা রেড্ডি—বীরত্ব ছিল রক্তের উত্তরাধিকার। সেনাবাহিনীর গভর্নর হয়ে অনন্তপুর, বেল্লারি, কুর্নুলসহ ৬৬টি গ্রামের দায়িত্ব তাঁর হাতে। দুই হাজার সৈন্যের বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করলেও তাঁর প্রকৃত শক্তি ছিল মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস।
রায়লসীমায় ব্রিটিশরা দখল নিলে তারা আয়ের ভাগ দাবি করে, কিন্তু নরসিংহ রেড্ডি সাফ জানিয়ে দেন—অন্যায়ের ভাগ চলে না। তিনি বেছে নেন সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করেন গেরিলা কৌশল। ১৮৪৬ সালের ১০ জুন কোইলকুন্তলার খাজানা আক্রমণের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহের প্রথম বজ্রপাত ঘটে। রুদ্রারামকে হত্যা করে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে জেলাশাসক হকচকিয়ে ওঠে। ক্যাপ্টেন নট ও ওয়াটসন তাঁকে ধরতে ব্যর্থ হলে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার—খবর দিলে ৫০০০ টাকা, আর মাথা কাটলে ১০,০০০ টাকা, যা তখন এক বিরাট অঙ্ক।
কিন্তু দাম দিয়ে কি আগুন নেভে? ২৩ জুলাই ১৮৪৬ সালে গুডালুরে নরসিংহ রেড্ডির সেনা আক্রমণে ব্রিটিশ বাহিনী পরাজিত হয়। প্রতিশোধে তাঁর পরিবারকে কদপায় বন্দি করা হয়। পরিবারের মুক্তির চেষ্টায় তিনি নাল্লামালা বনে আশ্রয় নিলেও ইংরেজদের তল্লাশি বাড়লে আবার কোইলকুন্তলায় ফিরে আসেন এবং রামবাধুনিপল্লে গ্রামের জগন্নাথ কন্ডায় মুহূর্তের অপেক্ষায় থাকেন।
অবশেষে বিশ্বাসঘাতকতার রাত নেমে আসে। খবর পেয়ে ব্রিটিশরা পুরো অঞ্চল ঘিরে ফেলে। ১৮৪৬ সালের ৬ অক্টোবর মধ্যরাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। নির্মম প্রহার, মোটা শিকল, রক্তমাখা পোশাকে পথে পথে টেনে নিয়ে যাওয়া—সবই শুধুমাত্র মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য, যাতে আর কেউ স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ না করে।
বিদ্রোহে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ৯০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ৪১২ জন খালাস পায়, ২৭৩ জন জামিনে মুক্তি পায়, আর ১১২ জনের ভাগ্যে কারাবাস—৫ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত, কেউ কেউ নির্বাসিত হয় আন্দামানেও। নরসিংহ রেড্ডির ওপর হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়। ছয় সপ্তাহ পর, ১৮৪৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল ঠিক ৭টায় কুর্নুল জেলার কোইলকুন্তলার সামনে প্রকাশ্যে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়—প্রায় দুই হাজার মানুষ নীরবে সেই মুহূর্তের সাক্ষী ছিল, চোখে অশ্রু আর বুকে জ্বালা নিয়ে।
আজও ইতিহাসের পাতায়, মানুষের স্মৃতিতে, আর স্বাধীনতার মাটিতে তাঁর নাম ধ্বনিত হয়—একজন বিপ্লবীর মতো, যে অন্যায়ের সামনে মাথা নত করেনি কখনো।
— লেখায়: প্রকাশ রায়
Read More